এপ্রিল ৯, ২০২০
সাতক্ষীরা জেলাতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ২ হাজারের মত মানুষ অন্য জেলা থেকে এসেছে
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্ব মানুষকে নিজ বাড়িতে রাখতে সচেতনতামূলক অভিযান পাশাপাশি মাইকিং করা হচ্ছে এবং শতভাগ হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া অন্যসব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সাতটি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৭টি টিমসহ জেলা সদরে পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে ৪টি টিম নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। তথ্য অধিদপ্তরের একটি সহ মোট ৩টি সচেতনতামূলক মাইকিং অব্যাহত আছে। সবাইকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্যে অনুরোধ করা হচ্ছে। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, এবং সাতক্ষীরাতে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরাতে কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়টি জেলা প্রশাসক তুলে ধরেণ। সিভিল সার্জন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন। সেনাবাহিনী পূর্বের ন্যায় এই দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। দেশের কয়েকটি জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ায় ঐ সকল জেলাতে কর্মরত লোকজন নিজ নিজ জেলায় ফিরতে চেষ্টা করছে। এর প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলাতে সা¤প্রতিক সময়ে প্রায় ২ হাজারের মত মানুষ অন্য জেলা থেকে এসেছে। এর মধ্যে নারায়নগঞ্জ থেকে আগত ৮ জনকে দেবহাটা উপজেলায় বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। আশাশুনি উপজেলায় ২৫০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এবং ৫৫০ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় প্রায় ১০০০ জন লোক অন্য জেলা থেকে এসেছে। এর মধ্যে ৫০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে, ২০০ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকিদেরকে চেকপোস্ট বসিয়ে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক অভিযানে ৭৩ জনকে নারায়নগঞ্জ থেকে আসার সময় আটক করে কালিগঞ্জ এবং শ্যামনগর উপজেলায় হস্তান্তর করেন।
সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এপর্যন্ত ৯১ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ৮ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়রগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৩৯,৫০০ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৭০ জন সদস্যের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ১ লিটার তৈল এবং একটি সাবানের প্যাকেজ সমাজ কল্যাণ তহবিল হতে বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণসামগী বিতরণের ক্ষেত্রে নিরাপদ সামিজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণসামগী বিতরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি সামিজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তাহলে যিনি বিতরণ করবেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার এর সহযোগিতায় ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন জেলা এবং উপজেলাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতন থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, নিজে নিরাপদ থাকুন, নিজ পরিবারকেও নিরাপদ রাখুন। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৪টি মামলায় ৫৯,০০০ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩ টি মামলায় ৬৬০০ টাকা, আশাশুনি উপজেলায় ৩টিমামলায় ২০০০ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ১টি মামলায় ৩০,০০০ টাকা, তালা উপজেলায় ১২ টি মামলায় ৬০০০ টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২ টি মামলায় ২৫০০ টাকা,শ্যামনগর উপজেলায় ৪ টি মামলায় ৪০০ টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৯ টি মামলায় ১১৭০০ টাকা। মসজিদে নামাজ ও জামায়াতের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সাতক্ষীরাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারনা চালাচ্ছে। 8,474,688 total views, 2,328 views today |
|
|
|